বর্তমান সময়ে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তথ্য। তাই তথ্যের নিরাপত্তা বিধান করা একান্তভাবে জরুরী। আমরা প্রাই সবাই ফেসবুক,টুইটার সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে থাকি এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্নধরনের তথ্য সেখানে আপলোড করে থাকি। যেখানে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত থেকে থাকে অনেক সময়। আবার আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে তথ্য ইমেইল করে থাকি।যেখানে ব্যবসায়িক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে থাকে।বর্তমানে অনলাইন বিজনেসের দিকেও আমরা মনোযোগী হচ্ছি।এক কথায় দৈনন্দিন জীবনে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আমরা তথ্যের আদান প্রদান করে থাকি। তাই অনলাইন প্লাটফর্মে আমাদের নিরাপদ থাকাটা জরুরী। অফলাইনে যেমন চোর-ডাকাতের ভয় থাকে আমাদের, এই বুঝি আমার টাকা পয়সা বা গহনা চুরি কিংবা ছিনতাই করে নিবে।ঠিক তেমনি অনলাইনে আছে তথ্য চোর।যাদেরকে শালীন ভাষায় হ্যাকার বলা হয়ে থাকে।যদিও হ্যাকার অনেক ধরনের হয়, তবে ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকাররাই হ্যাকিং বা, তথ্য চুরির সাথে জড়িত থাকে।অন্যদিকে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা মূলত সিকিউরিটি এনশিওর করে থাকেন।বর্তমানে তাদেরকে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিষ্টও বলা হয়ে থাকে।ইদানীং প্রায়শই শোনা যায় অমুকের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে তমুকের ফেসবুক পেজ কিংবা ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক হয়েছে।কখনো কখনো ইমেইল একাউন্ট,টুইটার একাউন্ট ও হ্যাক হয়ে থাকে। এইতো কিছুদিন আগে বারাক ওবামা,বিলগেটস সহ নামি দামি ব্যক্তিদের টুইটার একাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল।আবার অনেক সময় প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশ থেকেও টাকা তুলে নেবার ঘটনা ঘটেছে এমনকি এটিএম বুথ থেকেও টাকা তুলে নেয় হ্যাকাররা।এমনকি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ পর্যন্ত চুরি করে নিয়েছিল
সঙ্গবদ্ধ হ্যাকার গ্রুপ। আবার অনেক সময় ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে পারসোনাল ডেটা ব্যবহার করে ব্লাকমেইল করার ঘটনাও ঘটে থাকে।এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হ্যাকাররা ওতপেতে বসে আছে তথ্য চুরির জন্য।
এখন প্রশ্ন হলো এমন সব শক্তিশালী হ্যাকারদের হাত থেকে আমরা কিভাবে নিজেদের তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারি? কিভাবে ফেসবুক সহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারি?
প্রথমেই বলে রাখি হ্যাকাররাও
আমাদের মতই মানুষ তারা
ফেরেস্তা নন যে, তারা
যা চাইবে তাই করতে পারবে।মূলত
হ্যাকাররা আমাদের করা ভুল গুলোকে
কাজে লাগিয়ে এবং একরকম আমাদেরকে
ট্র্যাপে ফেলে আমাদের আইডি
গুলো হ্যাক করে নেয়।চলুন কিভাবে
ফেসবুক আইডি হ্যাক করা
হয় সেটা দেখি এবং
কিভাবে হ্যাকিং এর শিকার হওয়া
থেকে আমরা বেঁচে থাকতে
পারি সেটা দেখি।
১)ফিশিংঃ ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো ফিশিং।মূলত হ্যাকাররা ফেসবুকে লগইন করার যে পেইজ থাকে সেটাকে নকল করে ওই পেজের লিঙ্ক ভিকটিমকে ইমেইল করে কিংবা অন্য কোনো ভাবে দিয়ে থাকে এবং কিছু লোভনীয় অফার দিয়ে থাকে, অনেক সময় চাকরি প্রত্যাশীদের চাকরির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েও ফেক পেইজটিতে লগইন করতে বলে।যদি ভিক্টিম প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে হ্যাকারের বানানো ফেইক পেইজ এ লগইন করে তাহলে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড হ্যাকারের কাছে চলে যায়।ফলে একাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়।
বাঁচার উপায়ঃ ফিশিং থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে যা করতে হবে।
a)অচেনা কোনো মেইলের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পা দেয়া যাবেনা।
b) যদিও ফিশিং পেইজটি দেখতে হুবহু অরিজিনাল কিন্তু ইউআরএল ভিন্ন হবে।তাই লগইন করার পূর্বে ইউআরএল এর দিকে নজর দিতে হবে।যদি ইউআরএল ফেসবুকের না হয় তাহলে খুব সহজেই বোঝা যাবে এটা ফিশিং পেইজ।
২)কিলগারঃ কিলগার মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।হার্ডওয়্যার কিলগার এবং সফটওয়্যার কিলগার। কিলগারের কাজ হলো আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের টাইপকৃত যাবতীয় ইনফরমেশন কালেক্ট করা এবং তা হ্যাকারের নিকট সেন্ড করা।যদি হ্যাকার কোনো ভাবে আপনার মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে কিলগার ইনস্টল করে দিতে সক্ষম হয় তাহলে খুব সহজেই হ্যাকার আপনার কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের যাবতীয় ইনফরমেশন কালেক্ট করতে পারবে এবং আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা সহ আরো অনেক কিছু করতে পারবে।এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার হার্ডওয়্যার কিলগার ইনস্টল করতে হয় ম্যানুয়ালি। তার মানে হলো হ্যাকার আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের কাছে এসে কোনো ইউএসবি পয়েন্টে কিলগার ইনজেক্ট করে থাকে। সফটওয়্যার কিলগার মূলত একটি প্রোগ্রাম যেটা কোনো না কোনো লেজিট সফটওয়্যার এর সাথে বাইন্ড করে হ্যাকার আপনাকে দিয়ে ইনস্টলেশন করিয়ে নিতে পারে।
বাঁচার উপায়ঃ
a)হার্ডওয়্যার কিলগার থেকে বাঁচতে হলে আমাদের একটু সচেতন থাকতে হবে, যেন কেউ আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার না করে এবং প্রতিনিয়ত ইউএসবি পোর্টগুলো আমাদের চেক করতে হবে।তাহলেই হার্ডওয়্যার কিলগার থেকে বাঁচতে পারা সম্ভব।
b)সফটওয়্যার কিলগার থেকে বাঁচতে হলে আমাদের একটু সচেতন থাকতে হবে, যেন আমরা কোনো থার্ডপার্টি এপস কিংবা সফটওয়্যার ইউজ না করি এবং ডাউনলোড না করি।
c) কিলগার থেকে বাঁচতে হলে ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা যেতে পারে।ফায়ার ওয়াল আমাদের অনলাইন এক্টিভিটি চেক করে থাকে।যদি কোনো সাসপিশাস কিছু থেকে থাকে তাহলে ফায়ারওয়াল আমাদের সতর্ক করে দিবে।
d) মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস অথবা এন্টি ম্যালওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।যেটা খুব সহজেই সফটওয়্যার কিলগার শনাক্ত করতে পারে।
৩)ব্রুটফোর্স বা ডিকশনারি এ্যাটাকঃ অনেক সময় হ্যাকাররা আমাদের পাসওয়ার্ড গেজিং করার চেষ্টা করে থাকে।যেমন আমাদের প্রিয় ব্যাক্তির নাম,আমাদের পছন্দ-অপছন্দ,স্কুলের নাম,কলেজের নাম কিংবা প্রিয় পোষা প্রাণী ইত্যাদির নাম ব্যাবহার করে একটি পাসওয়ার্ডের ডিকশনারি তৈরি করে এবং একের পর এক সেই পাসওয়ার্ড গুলো দিয়ে ট্রাই করে একাউন্টের একসেস নিতে।আবার কিছু হ্যাকার সংখ্যা, সাইন এবং আলফাবেট ইউস করে ব্রুটফোর্স এটাক দিয়ে থাকে।মজার ব্যাপার হলো ডিকশোনারি এটাকের মাধ্যমে একাউন্ট হ্যাক নাও হতে পারে কারন ভিক্টিম এর পাসওয়ার্ড ডিকশিনারির পাসওয়ার্ডের সাথে নাও মিলতে পারে।কিন্তু ব্রুটফোর্স এটাকের মাধ্যমে কাংখিত পাসওয়ার্ড কোনো না কোনো এক সময়ে পাওয়া যাবেই।সেক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড একদিনের মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে আবার কয়েক বছর কিংবা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।এটা নির্ভর করে এটাকারের কম্পিউটার সিস্টেমের শক্তির উপর এবং পাসওয়ার্ড কতটা স্ট্রং তার উপর।
বাঁচার উপায়ঃ স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে এবং পোষা প্রাণীর নাম,নিজের নাম কিংবা প্রিয় ব্যাক্তির নাম পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
৪) সহজ পাসওয়ার্ডঃ অনেক সময় ইউজাররা পাসওয়ার্ড হিসাবে ১২৩৪৫৬,০০০০০০, রহিম,করিম কিংবা মোবাইল নাম্বারের ডিজিট দিয়ে থাকেন।সেক্ষেত্রে খুব সহজেই হ্যাকার ডিকশনারি এটাক দিয়ে পাসওয়ার্ড পেয়ে যান।
বাঁচার উপায়ঃ সহজ পাসওয়ার্ড দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তুলনামূলক স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
৫) ট্রোজান,ব্যাকডোর,ম্যালওয়্যারঃ অনেক সময় হ্যাকাররা কৌশলে ব্যাকডোর কিংবা ট্রোজান ভিক্টিমের মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে ইনস্টল করে ভিক্টিমের নেটওয়ার্কের সাথে সিকিউর কানেকশন তৈরি করে এবং একাউন্ট হ্যাক করে থাকে।
বাঁচার উপায়ঃ
a)থার্ডপার্টি এপস ব্যবহার করা থেকে এবং ইন্সটল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
b) কোনো সাসপিশাস লিংকে ক্লিক করা যাবেনা।
৬) ডাটা ব্রিচঃ অনেক সময় লো-সিকিউরিটি সম্পন্ন ওয়েবসাইটে আমরা একাউন্ট তৈরি করে থাকি।যদি কোনো কারনে ওই সকল ওয়েবসাইটের ডাটা ব্রিচ হয় তাহলে আমাদের ইমেইল সহ অনেক তথ্য হ্যাকারের দখলে চলে যায়।ফলে একাউন্ট হ্যাক করা সহজ হয়।
বাঁচার উপায়ঃ
a) সবসময় ডিফারেন্ট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।সব একাউন্টের জন্য সেম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে না।
b)ইউনিক,লং এবং স্ট্রং
পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে ইমেইল
এবং ফেসবুকের জন্য।
৭) ম্যান ইন দা মিডিল এটাকঃ অনেক সময় হ্যাকার ফ্রি ফেক ওয়াইফাই জোন ক্রিয়েট করে থাকেন।যদি ভিক্টিম ফেক ওয়াইফাই জোনে যান তাহলে হ্যাকার খুব সহজেই ক্রেডিনশিয়াল চুরি করতে সক্ষম হন।
বাঁচার উপায়ঃ কখনোই অপরিচিত এবং ইনসিকিউরড ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হওয়া যাবেনা।
৮) সেশন হাইজ্যাকিংঃ যদি ভিক্টিম এবং হ্যাকার সেম ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে থাকে।তাহলে হ্যাকার খুব সহজেই ভিক্টিমের কুকি চুরি করে নিতে সক্ষম হন।যার মাধ্যমে সহজেই ফেসবুক একাউন্টের একসেস নেয়া সম্ভব।
বাঁচার উপায়ঃ কখনোই ফ্রি এবং অচেনা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়া যাবেনা এবং ইনসিকিউরড ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করা যাবে না।
৯) স্প্যামিংঃ অনেক সময় স্প্যামাররা ফেসবুকের সিকিউরিটি কুয়েশ্চন বাইপাস করার চেষ্টা করে থাকেন। যেমন, ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ফেসবুক পাসওয়ার্ড রিকভকরি অপশন দেয়া থাকে।সেটা হতে পারে মোবাইল নাম্বার কিংবা ইমেইল এর মাধ্যমে।এবং নিচে একটা অপশন দেয়া থাকে "নো লংগার হ্যাভ একসেস টু দিস একাউন্ট"।স্প্যামাররা মূলত এই অপশনটি কাজে লাগিয়ে পাসওয়ার্ড রিকভারি করে থাকেন।এবং ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে থাকেন।
বাঁচার উপায়ঃ
a) স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা।
b) পাসওয়ার্ড রিকভারির জন্য শুধু মোবাইল নাম্বার না দিয়ে ফেসবুকে ইমেইল একাউন্ট যুক্ত করে রাখা।
c) টু স্টেপ ভেরিফিকেশন করে রাখা।
d)৩-৫ জন ফ্রেন্ডকে চুজ করে রাখা।যাতে করে আপনি ফেসবুক থেকে লগআউট হয়ে গেলে তারা সাহায্য করতে পারে।
e) প্রতিনিয়ত চেক করা, যে আপনার একাউন্টে কোন কোন ডিভাইস লগইন আছে।যদি অপরিচিত কোনো ডিভাইস দেখেন তাহলে সংগে সংগে সেটাকে লগআউট করে দেয়া এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিতে হবে।যাতে করে হ্যাকার পুনরায় লগইন করতে না পারে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হলো অন্যের মোবাইল কিংবা কম্পিউটার দিয়ে কখনো একাউন্টে
লগইন করবেন না।যদি করে থাকেন তাহলে
লগআউট করে দিতে ভুলবেন
না।
#হ্যাপি_অনলাইন_ব্রাউজিং
#হ্যাপি_ফেসবুকিং
wow bro...
ReplyDelete