আইনের দৃষ্টিতে পাবলিক প্লেসে স্মোকিং, একজন আইনের শীক্ষার্থীর ভাবনা - Suo Moto

Breaking

Tuesday, December 8, 2020

আইনের দৃষ্টিতে পাবলিক প্লেসে স্মোকিং, একজন আইনের শীক্ষার্থীর ভাবনা

 


একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শুরু করি। আমি আর আমার বন্ধু কিছুদিন আগে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে  যাচ্ছিলাম। লঞ্চ পারাপারের সময় আমাদের ঠিক বিপরীতে দাঁড়ানো একজন ১৮/১৯ বছর বয়সী ছেলে সিগারেট খাচ্ছিলেন। আর ধোয়াটা ঠিক আমাদের মুখে এসে লাগছিল। আরেকটা ঘটনা বলি,গত দু-একদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা মেয়ের স্মোকিং এর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।


বুঝতেই পারছেন আলোচনা টা কি নিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি। ঘটনা দুটোই মূলত এক। দুজনেই মূলত পাবলিক প্লেসে স্মোকিং করেছে। কিন্ত প্রথম ঘটনা টা যদি আমি ফোনে রেকর্ডিং করে ভাইরাল করতে চাইতাম তাহলে সেটা অতটা হাইপ সৃষ্টি করত না যেটা দ্বিতীয় ঘটনায় ঘটেছে।



এখানে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন ছেলেরা স্মোকিং করলে দোষ না মেয়েরা করলে সেটা দোষ কেন? বা মেয়েটার অনুমতি ব্যতীত তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা কি সাইবার বুলিং নয়? তবে এসব রেখে আজ আলোচনা করতে চাচ্ছি মূলত পাবলিক প্লেসে স্মোকিং সংক্রান্ত আইন নিয়ে।


ধূমপান তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন 'ধূমপান তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫' এর নং ধারা অনুযায়ী '


কোন ব্যক্তি কোন পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে ধূমপান করিতে পারিবেন না। কোন ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবেন।'


অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী কোন ব্যাক্তি যদি পাবলিক প্লেস বা পরিবহনে ধূমপান করেন তবে সেটা অপরাধ। এই অপরাধের জন্য অপরাধী ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড একই অপরাধ বারবার করলে পর্যায়ক্রমে উক্ত দন্ডের দ্বিগুন হারে দন্ডিত হবেন।


একই আইনের নং ধারায় পাবলিক প্লেস পাবলিক পরিবহন ঙ্গা  দেওয়া হয়েছে। পাবলিক প্লেস বলতে 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র (indoor work place), হাসপাতাল ক্লিনিক ভবন, আদালত ভবন, বিমানবন্দর ভবন, সমুদ্রবন্দর ভবন, নৌ-বন্দর ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বাস টার্নিমাল ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণী ভবন, চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য অন্য কোন স্থান অথবা সরকার বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, সময় সময় ঘোষিত অন্য যে কোন বা সকল স্থান'


আর পাবলিক পরিবহন বলতে  ' মোটর গাড়ী, বাস, রেলগাড়ী, ট্রাম, জাহাজ, লঞ্চ, যান্ত্রিক সকল প্রকার জন-যানবাহন, উড়োজাহাজ এবং সরকার কর্তৃক, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, নির্দিষ্টকৃত বা ঘোষিত অন্য যে কোন যান;' কে বোঝানো হয়েছে।


অন্যদিকে তামাকজাত দ্রব্য বলতে 'তামাক, তামাক পাতা বা উহার নির্যাস হইতে প্রস্তুত যে কোন দ্রব্য, যাহা চোষণ বা চিবানোর মাধ্যমে গ্রহণ করা যায় বা ধূমপানের মাধ্যমে শ্বাসের সহিত টানিয়া লওয়া যায় এবং বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং হুক্কা বা পাইপের ব্যবহার্য মিশ্রন ' কে বোঝনো হয়েছে।


একই আইনের নং ধারা অনুযায়ী ' অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির নিকট তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করলে ৫০০০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।



আইন থাকলেও নেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। যার ফলেই পাবলিক প্লেসে হরহামেশাই চলছে ধূমপান। অপরাধ করলে সবাই অপরাধী।  এক্ষেত্রে কে নারী-পুরুষ সেটা বিবেচনার সুযোগ নে


শুধু আইন আর নীতিমালা করে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে।  প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর।  এছাড়াও আইন ভেঙে কেউপাবলিক প্লেসেধূমপান করলে সেটার প্রতিরোধ করা প্রতিটি নাগরিকের দ্বায়িত্ব।


আসি ধূমপানের ক্ষতি নিয়ে। প্রতিবছর শুধু ধূমপানের কারণে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে এটি প্রতিরোধ যোগ্য অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষ মহিলা ধূমপায়ী গড়ে তাদের জীবনের যথাক্রমে ১৩. ১৪. বছর হারান। বলা হয়ে থাকে একটি সিগারেট গড়ে প্রায় এগারো মিনিট আয়ু কমিয়ে দেয়। সারাজীবন ধরে ধূমপানকারীর মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেক মানুষ ধূমপানের ক্ষতির কারণে মারা যায়। এছাড়াও  ধূমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটার হার বেশি। অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে যৌনমিলনের সময় লিঙ্গ উত্থানে অক্ষমতার সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার হার ৮৫% এরও বেশি।


এবার উপরের সেই ঘটনা দুটিতে ফেরা যাক। দ্বিতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে মানুষ যেমন বাকা চোখে তাকিয়েছে তেমনিভাবেই  প্রথম ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রেও একইভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিৎ। কারন দুটোই সমান অপরাধ। আপনার সামনে কোন অন্যায় বা অপরাধ সংঘটিত হলে সেটা প্রতিহত করা আপনার একান্ত নৈতিক দ্বায়িত্ব। আসুন ধূমপান মুক্ত সমাজ গড়ি।

 

আসাদুল ইসলাম

ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

No comments:

Post a Comment