১৯৭১ সালের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীনতা লাভ করে। অনেক আত্মত্যাগের স্মৃতিতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চির অম্লান হয়ে আছে।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার স্বীকার হয় এদেশের সাধারণ মানুষ। পুরো ঢাকা শহর পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে বাদ যায়নি রাস্তার কুকুর পর্যন্ত। সেদিন তারা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে এদেশের সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রদের। পুরো নয় মাস জুড়ে তাদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের ফলে নিহত হয় প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ। ধর্ষণের শিকার হয় প্রায় ২ লক্ষ মা-বোন। ভিটা-মাটি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয় প্রায় ১ কোটি মানুষ। হাজার হাজার তরুণ ও যুবারা দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য সেদিন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। এসবই খুব সুন্দর ও যুক্তিশীল ভঙ্গিতে জহির রায়হান তার ডকুমেন্টারি ফিল্ম "স্টপ জেনোসাইড" এ তুলে ধরেন। তিনি পুরো পৃথিবীর সামনে পাকিস্তানি হানাদার বাহীনির বর্বরতা ও নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছিলেন
"স্টপ জেনোসাইড
" এর মাধ্যমে। একই সাথে তিনি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন মুক্তিকামী মানুষের দেশমাতৃকার প্রতি ভালেবাসা এবং মুক্তিযুদ্ধকে।
তিনি প্রামাণ্যচিত্রটি শুরু করেন লেনিনের জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বই থেকে নেয়া একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। উদ্ধৃতিটি ঠিক এমন ছিল, "যারা স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আলাদা হবার অধিকার দাবি করে, তাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অভিযুক্ত করা, বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারকে পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের নামান্তর বলে অভিযোগ করার মতোই নির্বুদ্ধিতা এবং অসৎতা।
এরপর পটভূমীতে দেখা যায়, এক কিশোরীর ঢেঁকি পাড় দেবার দৃশ্য যার মাধ্যমে তিনি প্রাণচঞ্চল বাঙ্গালীর অস্তিত্বকে বোঝাতে চেয়েছিলেন। এরপরই চারিদিক অন্ধকার, কুকুরের ঘেউঘেউ ডাক আর মেশিনগানের গোলাবর্ষণের শব্দ ও আর্তচিৎকারের ধ্বনিতে মুখরিত চারদিক। অন্ধকার কেটে গেলে চারদিকে পড়ে থাকতে দেখা যায় লাশ আর লাশ।
তিনি খুব সুচারুভাবে এবং যুক্তিশীল উপায়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং আমেরিকার ভিয়েতনাম আক্রমণকে প্রামাণ্যচিত্রে ব্যবহার করেন। যেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে কিন্তু আমেরিকা সেদিনই ভিয়েতনামের মানুষদের উপর বোমা নিক্ষেপ করে এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। একইভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নির্বিচারে বাঙ্গালীদের হত্যা করছিলো ঠিক তখোনো জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
পরবর্তীতে তিনি প্রামাণ্যচিত্রে গনহত্যা, শরনার্থীদের সাক্ষাতকার এবং কষ্টের কথা তুলে ধরেন এবং বিশ্বকে প্রশ্ন করেন শুধুমাত্র পছন্দের মানুষকে ভোট দেবার অপরাধে কোন জাতি বা মানবগোষ্ঠীকে কোনোকালেই কি এমন চরম মূল্য দিতে হয়েছে কি না।
পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এবং মনোবল নিয়ে আলোকপাত করা হয় এবং যুদ্ধে জয়ী হবার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বিভিন্ন দেশে মানুষের আর্তনাদ এবং নির্যাতনের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিরন্তর সংগ্রামের অংশ হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্বকে বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর আহবান জানানোর মাধ্যমে প্রামাণ্যচিত্রটির ইতি টানা হয়।
মূলত প্রামাণ্যচিত্রটির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে যত চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে তার মধ্যে "স্টপ জেনোসাইড" অন্যতম।
Movie Link 1:- Stop Genocide (English)
No comments:
Post a Comment