জাপান বিশ্বের ৩য় অর্থনৈতিক পরাশক্তি।অল্প সময়ে অকল্পনীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য জাপান সমগ্র বিশ্বের কাছে সমাদৃত এবং আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুও বটে।জাপান বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র।বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে জাপান।জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরো গভীর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ সেশন থেকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত জাপানিজ স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের অনার্স প্রোগ্রাম চালু হয়।অবশ্য এই ডিপার্টমেন্টের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে বেশ আগে থেকেই এবং এখন ১৭তম ব্যাচ চলছে।অনার্স প্রোগ্রামে এখন ৩য় ব্যাচ চলছে এবং ২০২০-২১ সেশনে যারা এই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হতে চলেছো তারা হবা ৪র্থ ব্যাচ।
জাপানিজ স্টাডিজ মুলত ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন এর জাপান চ্যাপ্টার।সারা বিশ্বব্যাপী বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে জাপানিজ স্টাডিজ পড়ানো হয়।বাংলাদেশে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই এই ডিপার্টমেন্টে টা রয়েছে। জাপানিজ স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ ডঃ আবুল বারকাত।জাপানিজ গেস্ট লেকচারার রাও মাঝে মাঝে ক্লাস নেন।অন্যান্য টিচাররাও অনেক কোয়ালিফাইড।
জাপানিজ স্টাডিজ একদমই নতুন একটা ডিপার্টমেন্ট।যার ফলে এর কোনো সেমিনার
রুম নেই,কম্পিউটার ল্যাব নেই,নেই কোনো লাইব্রেরি।তবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নির্মান কাজ শেষ হলে আমরা সবকিছুই পেয়ে যাবো।সম্ভবত ভবনটির ১১তলায় হবে জাপানিজ স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের নতুন ঠিকানা।
অনেকেই
'জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার' ডিপার্টমেন্টের সাথে আমাদের 'জাপানিজ স্টাডিজ' ডিপার্টমেন্ট গুলিয়ে ফেলেন।আসলে এই দুইটা ভিন্ন
ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট।'জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার' ডিপার্টমেন্ট আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউটভুক্ত এবং 'জাপানিজ স্টাডিজ' সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত।
নতুন ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় স্বভাবতই এটা কারো পছন্দের তালিকায় থাকেনা,মেধা তালিকায় পিছিয়ে পড়ায় অনেকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই সাবজেক্টে ভর্তি
হয়।তবে ভর্তি হওয়ার পর আস্তে আস্তে
তাদের ধারনা পাল্টাতে থাকে।কয়েক মাস যেতে না যেতেই ডিপার্টমেন্টের
প্রতি বিতৃষ্ণা রুপান্তরিত হয় ভালবাসায়।কেননা,নতুন
আর ছোট্ট ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র,জুনিয়র,টিচার খুব ক্লোজলি মিশতে পারে এবং অনেক অল্প সময়েই সবাই সবার সাথে পরিচিত হয়ে যায়।নতুন একটা পরিবার পায় সবাই।ডিপার্টমেন্টের টিচাররা খুবই আন্তরিক এবং স্টুডেন্টরা টিচারদের গভীর সান্নিধ্যে আসতে পারে যেটা বড় বড় ডিপার্টমেন্টে
সম্ভব হয়না।
এই ডিপার্টমেন্টে জাপানিজ ভাষার পাশাপাশি জাপানের অর্থনীতি,রাষ্ট্রনীতি,সমাজনীতি,ইতিহাস,সংস্কৃতির সাথে ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কেও পড়ানো হয়।জাপানিজ স্টাডিজ খুবই সম্ভাবনাময় একটা ডিপার্টমেন্ট।সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সের অনেক ভাইয়া আপু স্কলারশিপের মাধ্যমে বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন।আমাদের অর্থাৎ অনার্সের স্টুডেন্টদের জন্য সেই সুযোগটা আরো অনেক বেশি।জাপান বাংলাদেশ থেকে আগামী বছরগুলোতে প্রচুর জনসম্পদ নেবে যার জন্য জাপানিজ ভাষা জানাটা আবশ্যক।শুধুমাত্র ভাষা জানা থাকলেই যেখানে জাপানে উজ্জল ক্যারিয়ারের হাতছানি সেখানে সমগ্র জাপান সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান যার মধ্যে থাকবে সে অবশ্যই আরো ভালো ক্যারিয়ার আশা করতে পারে।
এছাড়াও
জাপানের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও রয়েছে দারুন ক্যারিয়ারের হাতছানি।বর্তমানে বাংলাদেশে ২৮৫+ জাপানিজ কোম্পানি রয়েছে যেগুলোতে এই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের
জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ।ইতিমধ্যেই ডিপার্টমেন্টের সাথে জাপানের 'হোন্ডা' কোম্পানির চুক্তি হয়েছে যে,ডিপার্টমেন্টের ১ম
ব্যাচের শিক্ষার্থীরা 'হোন্ডা' কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবে।তাছাড়া নতুন ডিপার্টমেন্ট হওয়াই প্রথম কয়েকটি ব্যাচ থেকে অবশ্যই একাধিকজন এই ডিপার্টমেন্টর টিচার
হওয়ার সুযোগ পাবে।আর ব্যাংক,বিসিএস সহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি চাকরির পথ তো খোলা
রয়েছেই।
আর হ্যাঁ,ডিপার্টমেন্টে
সিজিপিএ মুটামুটি ভালো ওঠে।প্যারা মিডিয়াম লেভেলের তবে ল্যাঙ্গুয়েজটা বেশ কঠিন।রেগুলার কমবেশি পড়ালেখা করলে খুব একটা সমস্যা হবেনা আশা করি। আমার নিজের ডিপার্টমেন্ট বলে কিনা জানিনা তবে জাপানিজ স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে বলতে গেলে শুধু পজিটিভ দিকই সামনে আসে।নেগেটিভ দিকটা হচ্ছে তুমি হয়তো বুক ফুলিয়ে বলতে পারবানা যে তুমি জাপানিজ
স্টাডিজে পড়ো।অনেকেই হয়তো সাবজেক্টটার নামই শোনেনি কোনোদিন,অনেকে হয়তো নাক সিটকাবে,অনেক রকম মন্তব্য করবে। তবে আশা করি জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে আমরা গর্ব করে বলতে পারবো যে,"হ্যাঁ,আমি জাপানিজ স্টাডিজের স্টুডেন্ট ছিলাম।ইনশাআল্লাহ।
ফেরদৌস সালেহীন পিয়াস
দ্বিতীয় ব্যাচ
ডিপার্টমেন্ট অব জাপানিজ স্টাডিজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments:
Post a Comment