বাকস্বাধীনতা বনাম ধর্ম অবমাননা, বাংলাদেশ সংবিধান ও বিদ্যমান কিছু আইন - Suo Moto

Breaking

Tuesday, October 27, 2020

বাকস্বাধীনতা বনাম ধর্ম অবমাননা, বাংলাদেশ সংবিধান ও বিদ্যমান কিছু আইন

 

বাংলাদেশ সংবিধান ও বিদ্যমান কিছু আইন


মত প্রকাশের স্বাধীনতা একজন নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার এবং গণতন্ত্র সুসংহতকরণের অন্যতম মাইলফলক। স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার লক্ষ্যে সব নাগরিকের মতামত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ঠিক একই ভাবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার্থে কিছু কিছু মতামত প্রকাশ জনজীবনে সীমাবদ্ধ করাও প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯তম অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নাগরিকের চিন্তা বিবেক, বাক ভাব প্রকাশ এবং প্রেস বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র তার প্রতিটি নাগরিক কেই বাকস্বাধীনতা বা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করেছে। তবে এই স্বাধীনতা কি শর্তহীন? চাইলেই কি একজন ব্যক্তি যেকোন বিষয় নিয়েই যেকোন মন্তব্য করতে পারবেন?এক্ষেত্রে কি কোন রেষ্ট্রিকশান বা বাধা নেই? চলুন দেখে নেওয়া যাক সংবিধান কি বলে।


বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯() অনুচ্ছেদে  চিন্তা বা মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমুহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি অপরাধ সংঘটনের প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপ করা যাবে। অর্থাৎ, কেউ চাইলেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা বিরোধী মন্তব্য বা প্ররোচনা করতে পারবে না।


এছাড়া আদালত-অবমাননা, মানহানি অপরাধ সংঘটনের প্ররোচনা সম্পর্কিত বিষয়ে রাষ্ট্র চাইলে আইনানুগ, যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপ করতে পারবে। এখানে একটা কথা উল্লেখ করা দরকার, কিছু মৌলিক অধিকার কোন সময় নিরংকুশ নয়, সবসময় কিছু শর্তের অধীন হয়ে থাকে। অবাধ ভোগের নিশ্চয়তা দিলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কল্যাণ রাষ্ট্রে কোন ব্যক্তির অবাধ বা নিরংকুশ অধিকার থাকে না। কারন, কল্যাণ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ, আর তাই জনস্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের উপরে স্থান দেয়া হয়। সুতরাং, সংবিধানে ঘোষিত মৌলিক অধিকারগুলোর উপর যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপ করা যায়।


এবার আসা যাক বর্তমান সময়ের আলোচিত ধর্ম অবমাননার বিষয়ে আমাদের ফৌজদারি আইন কি বলে সে বিষয়ে। প্রচলিত ফৌজদারি আইনেই ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৯৫ থেকে ২৯৮ ধারায় সংক্রান্ত অপরাধ এবং শাস্তির বিধান সম্পর্কে বলা আছে। মোটা দাগে এই অপরাধগুলো হলো:


২৯৫কোনো বা যেকোনো বিশেষ ধর্মবোধে অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপসানলয়ের ক্ষতি সাধন বা অপবিত্র করা৷


২৯৫ () – কোনো বা যেকোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে উক্ত যে কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কাজ৷


২৯৬ধর্মীয় সমাবেশে গোলমাল সৃষ্টি৷

২৯৭সমাধিস্থান ইত্যাদিতে অনধিকার প্রবেশ৷

২৯৮ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার উদ্দেশে শব্দ উচ্চারণ বা অঙ্গভঙ্গি৷


সব অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান আছে। অর্থাৎ, কোন ধর্ম বা ধর্মীয় কোন বিষয়ে অবমাননাকর কোন বক্তব্য প্রদান করলে তা ফৌজদারি অপরাধের সামিল। এখানে আপনি বলতেই পারেন যে সমালোচনা বা বাকস্বাধীনতা আপনার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্ত এটাও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে রাষ্ট্র চাইলে আপনার চিন্তা বা বাকস্বাধীনতার উপর আইনানুগ বাধা-নিষেধ আরোপ করতে পারে। এখানে ফৌজদারি আইনের ধারা ২৯৫-২৯৮ এ, সেই বাধা-নিষেধের একটি আরোপ করা হয়েছে।


এছাড়াও আইসিটি আইনের ৫৭() ধারায় বলা হয়েছে– ‘‘কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা ধরনের তথ্যাদি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷'' অর্থাৎ, কেউ যদি ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ওয়েবসাইটে এমন কোন কিছু প্রচার করে যেটা মানহানিকর বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে বা ধর্মীয় অনুভূতি তে আঘাত করে সেটা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধ বলে গন্য হবে।


মোঃ আসাদুল ইসলাম

ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

No comments:

Post a Comment